Followers

Tuesday, February 11, 2014

যে সব কারনে আমি লেখক হতে পারিনি 

আমি কেন লেখক হতে পারি নি, তার বেশ কিছু কারন আছে। যেমন ধরুন, আমি লেখালেখি নিয়ে অনেক আলসেমি করি। পড়ে দেখব বা পড়ে লেখব করতে করতে অনেক লেখাই হারিয়ে গিয়েছে। লেখা ফেলে রাখার অন্যতম কারন আলসেমি, স্রেফ আলসেমি। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। আমি আরাম করতে গিয়ে, লেখা হারিয়ে ফেলেছি। অনেক লেখাই অনেক কষ্ট করেও আর ফিরিয়ে আনতে পারিনি। প্রতিটি মুহূর্তের লেখা আছে, স্মৃতিতে সেই মুহূর্তগুলো কিছুটা বেঁচে থাকে, পরে সেগুলো হারিয়ে যায়, খাতায় অথবা অন্য কোথাও না লিখে রাখলে, অন্য মুহূর্তের ভীড়ে হারিয়ে যায়।

এমনো হয়েছে যে, কিছু লেখা আসছে, কিন্তু আলসেমির কারনে লেখা হচ্ছে না, তাই মোবাইলে লেখার শুরুটা লিখে রাখি, পরে লেখব ভেবে। কিন্তু পরের সময়টা সচরাচর আসে না, আসলেও সেই লেখাটা সেই রকম করে আর লেখতে পারি না। কেননা সেই লেখার মুহূর্তটা সময়ের সাগরে হারিয়ে গেছে।

আমার কাছে মনে হয়, লেখালেখি করতে যে পরিমান ধৈর্য থাকা প্রয়োজন, ততটুকু আমার নেই। বিশেষ করে গল্প, উপন্যাস লেখতে অনেক অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন। কোন গল্প শুরু করা, সেই গল্প অনেক সময় চালিয়ে যাওয়া, কখনো থামা, আবার শুরু করা। কত গল্পের শুরু করেছি তার ইয়াত্তা নেই,কিন্তু চালিয়ে যাওয়া হইনি। কোথাও থেমেছি কিন্তু পুনঃরায় শুরু করা হয় নি।

অনেক লেখায় আমি তরিঘড়ি করে শেষ করে ফেলেছি। এক গল্পে ১৫/১৬ লাইনের মধ্যে গল্পের ইতি টেনে ফেলেছি। কিন্তু ওভাবে আমি চিন্তা করেনি,
প্লট করা ছিল, তারাহুড়ো করে গল্পের শেষ করে ফেলেছি। আরও সময় দিলে হয়তো গল্প এগোত, আমি সময়ই দেইনি, গল্প ও অল্পতেই শেষ হয়ে গিয়েছে।

আমার কাছে মাঝে মাঝে মনে হয়, তারাহুড়ো করে লেখা শেষ করি বলে, আমি বেশির ভাগ সময় কবিতা লেখেছি এবং লেখি। কবিতা লেখতে খুব কম সময় লাগে এবং অল্পতেই অনেক কিছু বলা যায়, অনেক কিছু বুঝানো যায়। এমনো হয়েছে আমি কয়েক মিনিটে একটা দুইটা কবিতা লিখে ফেলেছি। আসে পাশে চিরকুট থাকলে, তাতে লিখে রেখেছি, সাদা কাগজ দেখলে আমার মাথা খারাপ হয়ে যেত কিছু লেখার জন্য, কবিতার কিছু কথা হুট করেই সাজানো যেত, কিন্তু গল্প তো আর হুট করে হয় না, চিরকুটেও রাখা যায় না।

লেখায় ব্রেক পরলে আমার লেখা হয় না, যেটা আগেও বলেছি, কিন্তু কোন লেখা আমি লেখে রেখেছি খাতায় অথবা মোবাইলে, সেই লেখাও আমার ধরা হয় না, টাইপ করে যে সেভ করে রাখব, সেটাও করতে পারি না। ভাবি, লিখে রাখা লেখা টাইপ করব, বরং নতুন লেখা লেখি, যেগুলো লেখা হয়েছে, সেগুলোতো লেখাই আছে, ওগুলো পরে দেখা যাবে। পরে আর দেখা হয় না, নতুন লেখার ভীড়ে পুরনো লেখা অবহেলিত।

লেখার জন্য প্রতিভার প্রয়োজন আছে, সেই জিনিসটায় আমার বেশ অভাব বোধ করি। আমি কখনোই তেমন প্রতিভাবান ছিলাম না, তাই হয়তো লেখতে গিয়ে লেখা ফুরিয়ে গেছে, প্রথম আর শেষটা দেখেছি ঠিকই, কিন্তু মাঝের অংশটায় গোলমেলে ছিল।
ভাল স্টুডেন্ট মানেই কিন্তু ভাল প্রতিভা না, তবে ভাল স্টুডেন্ট হলে ধরে নেয়া যায়, তার ভিতরে কিছু অর্জনের যথেষ্ট স্পৃহা আছে, সে জানে কিভাবে কিছু অর্জন করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে, খুব কম ভাল স্টুডেন্টরাই সাহিত্য জগতে আসে, যারা আসেন, তারা কিন্তু অনেক ভাল করেন। যদিও আমি একদমই ভাল স্টুডেন্ট না, আমার ভিতরে গুছানো ভাবটাও নেই। প্রতিভার কোন স্কুল নেই, তবে বিচক্ষণতাকে শানিত করা যায়। চার পাশের জগতটাকে গভীর ভাবে লক্ষ্য করতে শিখতে হয়, জানতে হয়, তা হলেই না লেখক হওয়া যায়। যে লেখকের বিচক্ষণতাকে যত বেশি, তার লেখার গভীরতা ততখানিই। আমি এখনো বিচক্ষণ হয়ে উঠতে পারি নি, লেখক হওয়াও হয়ে উঠেনি।

লেখতে গেলে আর একটি জিনিস খুব প্রয়োজনঃ বই পরা। প্রচুর বই পরা, হরেক রকম লেখা পরা। আগে প্রচুর বই পরতাম, হাতের নাগালে যা পেতাম তাই পরতাম। পড়ার বইয়ের চেয়ে গল্প কবিতার বই বেশি পরতাম। পাল্লা দিয়েও বই পরতাম। কেউ এত মোটা বই পড়েছে, আমি তার চেয়ে বেশি মোটা বই পরতাম। কিন্তু বেশ কিছু দিন আগের মত
করে গল্প, উপন্যাস পড়া হয়ে উঠছে না। এর একটা কারন হচ্ছে, অন্য কিছু পরলে আমার লেখা বন্ধ্য হয়ে যায়।মনে হয় লেখা কিছুই হচ্ছে না, কি সব লেখছি।এই নিয়ে খুব সমস্যায় আছি বেশ কিছু দিন। আর একটা কারন, সময়। খুবই কম সময় পাই, কাজ আর কাজ। সময় হয়ে উঠে না তেমন। লেখা বন্ধ্য হয়ে যাওয়া একটা বয়াবহ ব্যাপার, লেখা বন্ধ্য হবার ভয়েই হোক কিংবা সময়ের অভাবেই হোক বই পড়া হচ্ছে কম, যেটা মোটেই গ্রহন যোগ্য না। লেখতে গেলে প্রচুর বই পড়া প্রয়োজন, নিয়মিত বই পড়া প্রয়োজন।

এখনকার সময়ে লেখতে গেলে, টেকনোলোজি জানা প্রয়োজন আছে। ডিজিটাল মিডিয়ার কারনে, বাংলা লেখা জানা অনেকটা বাধ্যতামূলক। নিজের ব্লগে অথবা পেজে পোস্ট করার জন্য বাংলা লেখা জানতে হবে। আমি অনেক দেরি করে বাংলা লেখা শিখেছি। বাংলা লেখতে প্রচুর সময় লাগে, সময়টাই কম, লেখতে গিয়ে হয়রান, ধৈর্য হারা।

যেকোনো সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ নাকি, সমস্যাটা কি, সেটা বের করা। আমি সমস্যাগুলো বের করেছে, পরের ধাপ গুলোতো পাচ্ছি না, সমাধান হচ্ছে কই! সমাধান হচ্ছে না।এত কিছু পাড়ি দিতে পারছিনা বলেই লেখক হতে পারছিনা। অনেকে বলতে পারেন, তাহলে লেখার দরকারটা কি। না লেখলেই হয়। সমস্যাও নেই, সমাধান খোঁজারও প্রয়োজন নেই। তাহলে আপনি আমার আসল সমস্যাটা বুঝেননি, আসল সমস্যা হচ্ছে, আমি আমি না লেখে থাকতে পারব না, লেখতে আমাকে হবেই, কিন্তু আমি ঠিক মত লেখতে পারছি না। বাঁচার জন্য লেখতে হবে, বাঁচানোর জন্য লেখতে হবে। চুপ মেরে গেলেন তো, সমস্যা শুনলে সবাই চুপ মেরে যায়।

No comments:

Post a Comment