Followers

Friday, March 14, 2014

পতাকা এবং অন্যান্য

পতাকা এবং অন্যান্য

১।
কিছুদিন আগে অন লাইনে একটা ভিডিও দেখেছিলাম। ভিডিওতে দেখানো হচ্ছিল যে, প্রশ্নকর্তা বেশ কিছু জনকে প্রশ্ন করছিলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারী নিয়ে, এইসব দিনে কি হয়েছিল তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল। বেশির ভাগই উত্তর দিতে পারে নি, অদ্ভুত সব উত্তর দিয়েছে, কিছু কিছু উত্তর খুবই হাস্যকর এবং লজ্জাকর।
প্রশ্ন কর্তা কি ইচ্ছে করে, যারা পারেনি তাদের দেখিয়েছে,  না আসলেই ঘটনা এরকম বুঝতে পারিনি, মানতে কষ্ট হচ্ছিল বলেই হয়ত, বুঝতে পারি নি। যাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, তারা শিক্ষিতই মনে হয়েছিল, স্কুল কলেজে কি বাংলাদেশের ইতিহাস উঠিয়ে ফেলা হয়েছে, এই সব দিনে কি হয়েছিল এবং কেন হয়েছিল, সেইসব নিয়ে কি  শিক্ষা দেওয়া হয়নি!  আর দেশের এত গুরুত্ব পূর্ণ দিনগুলো জানতে খুব বেশি  কি শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। আমার কিন্তু তা মনে হয় না। আমার কাছে মনে হয় সমস্যা অন্য কোথাও, সমস্যা আমাদের বোধে, সমস্যা আমাদের মাঝে একে অন্যের প্রতি অবহেলার, নিজের ভিতরে অহমিকায়। এর অনেক প্রতিকারই আছে। আমার কাছে যেটা সহজ মনে হয়েছে যে, আমাদের ইতিহাস নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করা, বেশি বেশি লেখা, দুরের হোক কাছের হোক সবাইকে জানানো। মানুষ গর্বিত বিষয় নিয়ে খুশি হয়, আহাল্বাদ করে, এর ওর কাছে বলে বেড়ায়, নানান ছেলে মানুষি করে। আমাদের যে ইতিহাস তাতো গর্বের, তা নিয়ে কি করেছি। তেমন কিছুই না। তবে আমি চেষ্টা করি বিদেশীদের সাথে কথা বলার সময় বাংলাদেশের সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে, ফেব্রুয়ারির, মার্চের, বৈশাখের, স্বাধীনতার আর বিজয়ের কথা বলতে আমার বরাবরই ভাল লাগে। কাছের লোক জনের জন্য কিছু লেখা লেখি করে নিজের দেশেকে নিয়ে আমার চিন্তা আর আবেগের কথা তুলে ধরি,  দেশকে নিয়ে ভালবাসা আহাল্বাদে দোষের কি আছে!

২।
আমাদের দেশাত্মবোধ শুধু কয়েকটি দিনে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। গোটা কয়েকটা দিনের শেষে দেশেই থাকি, তবুও দেশের কথা ভুলে যাই। তা নাহলে, কেউ বাংলাদেশের মাটিতে অন্য দেশের পতাকা উড়াতে পারতনা। যারা গ্যালারীতে বসে অন্য দেশের পতাকা উড়িয়েছে, তারা ফেব্রুয়ারিতে, বৈশাখে, বিজয় দিবস উদযাপন করেছে, শুধুই অন্যের দেখা দেখি, দিনগুলো  কি এবং কেন সে ব্যাপার কিছুই জানে না। দেশ সম্পর্কে বিন্দু মাত্র জ্ঞান আর ভালবাসা থাকলে, কেউ পাকিস্থানের পতাকা নিয়ে উল্লাস করত না, অন্য দেশের পতাকা উড়াতে হীনমন্যতা বোধ করত। আমার মনে হয় এদের হীনমন্যতা বলতে কিছু নেই, থাকবেই বা কি করে, অপসংস্কৃতি ঢুকে গেছে তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
 অনেকে ধর্মকে টেনে এনে বলে ওরা তো মুসলিম, তাই পাকিস্থানকে সাপোর্ট করি। প্রথমত, ধর্মেতো এই সব খেলা সবিই নিষেধ। তাহলে খেলা দেখেন কেন। আচ্ছা খেলা দেখেন আপনার বিষয়, কিন্তু একাত্তুরে বাংলাদেশের বুকে যারা হত্যা যজ্ঞ চালিয়েছিল তারা কি মোসলমান ছিল না,  নাকি ভিন্ন ধর্মী কাউকে দিয়ে এই দেশের লোক জনকে হত্যা করেছে! এদেশের লোক জন কি ধর্মের ভাই ছিল না তখন। তবে এখন কেন আগ বাড়িয়ে ধর্মের ভাই ভাই বলে আহাল্বাদকরেন! অজ্ঞতার সীমা থাকা দরকার। আইন করে বাংলাদেশের মাটিতে অন্য দেশের পতকা উত্তোলন বন্ধ করা উচিৎ। যারা চোখ থাকতেও নিজের ভুল দেখে না, তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দিখিয়ে দিতে হয়।

৩।
মার্চ মাস চলছে। স্বাধীনতার মাস চলছে। দেশের প্রতিটা মানুষের জানা উচিৎ, আমাদের স্বাধীনতার শুরু এ মাস থেকে, আমাদের যুদ্ধ হয়েছে আমাদের স্বকীয়তা বজায় রাখার, আমাদের আপন সংস্কৃতি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য। খেলার গ্যালারিতে কিছু মূর্খ জনতার গণ্ডামি ছাড়াও, বসিবি T20 এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, নিজের দেশের তারকাদের দমিয়ে রেখে, অন্য দেশের শিল্পীদের নিয়ে যে আদিখ্যেতা করল, তা দেখে খুবই হতবাক হয়েছি। বাংলাদেশে খেলা হচ্ছে, বাংলাদেশের শিল্পীরাই বেশি প্রাধান্য পাবে, এদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরবে,  এটাই স্বাভাবিক।  অন্য দেশের শিল্পীরা আমাদের অতিথি, তাদের আপ্যায়ন করা সমুচিত, কিন্তু তাদের নিয়ে বেশি আদিখ্যেতা ভাল সাঁজে না। বাংলাদেশের শিল্পীদের প্রতি দর্শকদের অনুভুতি খুবই বেদনাদায়ক। ভাল করেই বোঝা যাচ্ছে, ভারতীয় সংস্কৃতি বাংলাদেশের প্রতি রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে গেছে। কিছুদিন পরে আমাদের অন্যান্য অনুষ্ঠানেও হিন্দি গান শোনা যাবে। এটা আমরাই হতে দিয়েছি এবং দিচ্ছি, নিজের স্বকীয়তা আর নিজের সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে, অন্য সংস্কৃতির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। আসলেই স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, স্বাধীনতা রক্ষা করা অনেক অনেক কঠিন।

৪।
ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা, বাংলাদেশের ইতিহাস আর সংস্কৃতি সবসময় আমার  কাছে প্রেরণার আর গর্বের। আমি আমরন বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করে যাব, আমি বাংলার গান গেয়ে যাব, আমি বাংলায় গান গেয়ে যাব। পতাকা নিয়ে একটি কবিতা দিয়ে শেষ করছিঃ

পতাকা

এই পতাকা তুলে ধরো মুক্ত আকাশে,
উড়িয়ে দাও মুক্ত বাতাসে,
জানিয়ে দাও তোমার স্বাধীনতার কথা,
জানিয়ে দাও তোমার ইতিহাস গৌরবমাখা,
সবুজ অংশটুকু পুরো বাংলাদেশের কথা,
লাল জায়গাটুকু রক্তস্নাত স্বাধীনতা,
তোমার হাতে এক জাগ্রত জাতির নিশান,
তোমার হাতে অন্যায়ে আপোষহীন জাতির প্রমাণ,
উঁচিয়ে ধরো শক্ত দুহাতে,
উড়িয়ে দাও মুক্ত বাতাসে,
জানিয়ে দাও তোমার স্বাধীনতার কথা,
জানিয়ে দাও তোমার ইতিহাস গৌরবমাখা...




No comments:

Post a Comment